কোন রোগের কি টেস্ট
কোন রোগের কি টেস্ট

আসসালামু আলাইকুম, “কোন রোগের কি টেস্ট জেনে নিন” পোস্টে স্বাগতম। kun ruger ki test. চিকিৎসা ক্ষেত্রে কোন রোগের জন্য পরীক্ষা একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। এটি চিকিৎসা পেশাদারদেরকে সাধারণ সংক্রমণ থেকে শুরু করে দীর্ঘস্থায়ী অসুস্থতা পর্যন্ত বিভিন্ন রোগ নির্ণয় ও চিকিৎসা করতে সক্ষম করে। পরীক্ষার প্রক্রিয়ার মধ্যে একটি রোগীর লক্ষণ, চিকিৎসা ইতিহাস পরীক্ষা করা এবং একটি নির্দিষ্ট রোগের উপস্থিতি বা অনুপস্থিতি নির্ধারণের জন্য পরীক্ষাগার পরীক্ষা করা জড়িত।

ডাক্তাররা রোগ বা অবস্থা নির্ণয়ের জন্য বিভিন্ন পরীক্ষার আদেশ দিতে পারেন। ল্যাবরেটরি পরীক্ষা, ইমেজিং পরীক্ষা এবং শারীরিক পরীক্ষা সহ রোগ নির্ণয়ের জন্য বিভিন্ন ধরনের পরীক্ষা ব্যবহার করা হয়। প্রতিটি পরীক্ষা একটি নির্দিষ্ট উদ্দেশ্যে কাজ করে এবং ডাক্তারদের সঠিক নির্ণয় করতে সাহায্য করার জন্য মূল্যবান তথ্য প্রদান করে। বিভিন্ন মেডিকেল টেস্টের নাম ও কোন কোন রোগের কি কি পরীক্ষা জানা থাকলে অযাচিত পরীক্ষা এড়ানো যাবে।

কোন রোগের জন্য কি টেস্ট দেওয়া হয়

সঠিক রোগ নির্নয় করার জন্য চিকিৎসক সাধারণত রোগের লক্ষাণ শুনার পর মেডিক্যাল টেস্ট দিয়ে থাকেন। এখানে আমরা ১২ টি মেডিক্যাল টেস্টের নাম এবং রোগের লক্ষাণ উল্লেখ করেছি। তাহলে আসুন জেনে নিই, কোন রোগের কি টেস্টঃ

১। CBC: Complete blood count

Complete blood count (CBC) হল একটি রক্ত পরীক্ষা, যা আপনার রক্তের বিভিন্ন উপাদান যেমন লোহিত রক্ত কণিকা, শ্বেত রক্ত কণিকা এবং প্লেটলেট পরিমাপ করে।

  • জ্বর হলে, কেন জ্বর হচ্ছে সে সম্পর্কে ধারণা পাওয়ার জন্য এই টেস্ট দেওয়া হয়।
  • শরীরে রক্তের পরিমাণ কেমন।
  • রক্তের ঘাটতি থাকলে সেইটা আয়রণ বা ভিটামিনের অভাবে কিনা তার একটা ধারণা পাওয়া যায়। আরো অনেকগুলো কারণ আছে রক্তশূন্যতার সেইসব ব্যাপারে প্রাথমিক ধারণা পাওয়া যায়
  • কোন ব্যক্তির শরীরের ভিতরে এলার্জি কেমন তার ধারণা পেতে এই টেস্ট করা হয়। ( S. IgE নামক টেস্ট ও দেয়া হয়)
  • প্রদাহ বা ইনফেকশন কিরকম তার ধারণা পাওয়া যায়।
  • রক্ত জমাট বাধার বাধানোর উপাদানের পরিমাণ কেমন তা জানা যায়। (যেমন ডেংগু হলে Platelet কমে যায় অর্থাৎ রক্তপাত হবার প্রবণতা বেড়ে যায়।
  • ব্লাড ক্যান্সার হয়েছে কিনা সে সম্পর্কে ধারনা পাওয়ার জন্য এই টেস্ট দেওয়া হয়।

২। Urine RME: প্রসাবের পরীক্ষা

Complete Blood Count (CBC) হল একটি সাধারণ পরীক্ষা যা কোষ, ব্যাকটেরিয়া, প্রোটিন, চিনি এবং অন্যান্য পদার্থের মতো বিভিন্ন উপাদানের জন্য প্রস্রাবের নমুনা পরীক্ষা করে। এই পরীক্ষাটি মূত্রতন্ত্রের সামগ্রিক স্বাস্থ্যের মূল্যায়ন করতে করা হয় ও কিছু নির্দিষ্ট ট্রেটমেন্ট কন্ডিশন নির্ণয় করতেও সাহায্য করে।

  • ইনফেকশান কেমন আছে।
  • গ্লুকোজ বা সুগার (ডায়াবেটিস) যায় কিনা।
  • প্রোটিন যায় কিনা ( কিডনিতে কোন সমস্যা থাকলে)
  • রক্ত যায় কিনা।
  • কিডনিতে ক্যান্সার বা পাথর রয়েছে কিনা সে সর্ম্পকে জানা যায়।

৩। Serum Creatinine:

যেইসব রোগ বা অবস্থায় কিডনির সমস্যা হতে পারে তার ব্যাপারে একটা ধারণা নেয়ার জন্য। (প্রেশার বা ডায়াবেটিস রোগীর জন্য বাধ্যতামূলক একটা টেস্ট। ব্যথার ঔষধ দেয়ার আগেও এই পরীক্ষা করে নেয়া উচিত)

৪। Lipid Profile:

রক্তে চর্বির অবস্থা জানার জন্য চিকিৎসক এই টেস্ট দিয়ে থাকেন। এটি খুবই গুরত্বপূর্ণ একটি টেস্ট। কেননা, রক্তে চর্বি বেশি হলে হার্ট অ্যাটাক বা ব্রেইন স্ট্রোক কিংবা লিভার ড্যামেজ কিংবা প্যাঙ্ক্রিয়াটাইটিস এর মত মারণঘাতী সমস্যা হতে পারে। কাজেই যাদের হাই প্রেশার বা ডায়াবেটিস আছে তাদের জন্য বছরে অন্তত একবার হলেও এই টেস্ট করানো উচিৎ।

৫। RBS: Random blood sugar

ডায়াবেটিস আছে কিনা সেই ব্যাপারে জানার জন্য প্রাথমিক পরীক্ষা (আদর্শ টেস্ট হলো FBS আর HbA1C%)। একজন হাই প্রেশার বা রোগী যেইসব টেস্ট প্রতি বছর করা উচিত সেইগুলা হলো -

  • CBC/Urine RE/S.
  • Creatinine/ECG/Lipid Profile সহ চোখটাও পরীক্ষা করিয়ে নেওয়া ভালো। কেননা ডায়াবেটিস ও হাই প্রেশার হচ্ছে নীরব ঘাতক, এরা মস্তিষ্ক/হৃতপিন্ড/হাত-পা/কিডনি এইসবের মারাত্মক ক্ষতিসাধন করে মরণ ডেকে আনতে পারে।

৬। Serum Uric Acid, CRP:

বাত ব্যথার রোগীদের জন্য দেয়া হয়। যেমন রক্তে Uric acid এর পরিমাণ বেশি থাকলে গেটে বাত হতে পারে। SLE বাদে বেশিরভাগ বাত ব্যথাতেই CRP বাড়ে

৭। S. Bilurubin:

কোন রোগীর জন্ডিসের কি অবস্থা সে সম্পর্কে জানার জন্য প্রাথমিক টেস্ট হচ্ছে S. Bilurubin।

৮। Serum TSH/ T3/ T4:

হরমোন খুব গুরত্তপূর্ণ শরীরের ঠিকমতো কাজ করার জন্য। একটা উপাদান এইদিক ওইদিক হলে ঝামেলা শুরু হয়। এইটা অনেক বিস্তারিত বিষয় তাও ছোট্ট করে বলি, অনেকের গরম ই সহ্য হয়না, হাত পা অনবরত ঘামে, বুক ধড়ফড় করে। অনেকের আবার ঠান্ডা সহ্য হয়না, গরমের দিনেও গরম লাগেনা তেমন, শরীর ফুলে যায়। থায়রয়েডের সমস্যা বা গলা ফোলা দেখার জন্যও এই টেস্টগুলো করা হয়।

৯। Serum Electrolyte:

আমাদের রক্তে কতগুলো উপাদান আছে যেমন Sodium , Potassium , Chloride , Bi- Carbonate এইগুলা যদি ঠিকমতো না থাকে তাহলে সমস্যা দেখা যায় যেমন শরীর প্রচন্ড দুর্বল হয়ে যায় কিংবা অজ্ঞান হয়ে যায়, খিচুনি হয় , রোগী চারপাশে কি হচ্ছে সেই ব্যাপারে confused থাকে ইত্যাদি। (যেমন অনেক বেশি বমি বা ডায়রিয়ার ক্ষেত্রে এই পরীক্ষাটা করানো উচিত )

১০। BT /CT (bleeding time/Clotting time):

BT এবং CT পরীক্ষা হল ল্যাবরেটরি পরীক্ষা যা রক্তের জমাট বাঁধার ক্ষমতা নির্ণয় করে। BT পরীক্ষা রক্তপাত বন্ধ করার জন্য একটি ছোট খোঁচা ক্ষতের জন্য প্রয়োজনীয় সময় পরিমাপ করে, যখন সিটি পরীক্ষা একটি টেস্ট টিউবে রক্ত ​​জমাট বাঁধতে সময় নেয়। এই পরীক্ষাগুলি রক্তপাতের ব্যাধি নির্ণয় এবং অ্যান্টিকোয়াগুল্যান্ট থেরাপির কার্যকারিতা নিরীক্ষণে কার্যকর।

বিটি পরীক্ষার সময়, একটি রক্তচাপের কাফ বাহুতে স্ফীত হয় এবং একটি ল্যানসেট দিয়ে একটি ছোট খোঁচা ক্ষত তৈরি করা হয়। ক্ষত থেকে রক্তপাত বন্ধ করার সময় পরিমাপ করা হয়। CT পরীক্ষায়, একটি রক্তের নমুনা একটি অ্যান্টিকোয়াগুল্যান্ট ধারণকারী একটি টেস্ট টিউবে সংগ্রহ করা হয় এবং রক্ত জমাট বাঁধতে কতটা সময় লাগে তা পরিমাপ করা হয়। উভয় পরীক্ষাই সহজ, দ্রুত এবং নির্ভরযোগ্য এবং সাধারণত ক্লিনিকাল অনুশীলনে ব্যবহৃত হয়।

১১। ECG:

কোন ব্যক্তির হৃদপিন্ডে কোন সমস্যা হয়েছে কিনা তার প্রাথমিক ধারণা নেয়ার জন্য এই মেডিকেল টেস্ট করা হয়। সুতরাং বুকে ব্যথা হলেই এইটা করা উচিত। ইসিজি পরীক্ষা হার্টের ছন্দ, হার এবং বৈদ্যুতিক পরিবাহী ব্যবস্থা সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য প্রদান করতে পারে। এটি বিভিন্ন অবস্থার নির্ণয় করতে সাহায্য করতে পারে যেমনঃ

  • অ্যারিথমিয়াস - হার্টের অস্বাভাবিক ছন্দ যেমন অ্যাট্রিয়াল ফাইব্রিলেশন, ব্র্যাডিকার্ডিয়া বা টাকাইকার্ডিয়া।
  • হার্ট অ্যাটাক - রক্ত ​​প্রবাহের অভাবের কারণে হার্টের পেশীর ক্ষতি।
  • হার্টের ভালভ রোগ - এমন একটি অবস্থা যেখানে হার্টের ভালভ সঠিকভাবে কাজ করে না।
  • জন্মগত হৃদরোগ - জন্মের সময় উপস্থিত হার্টের ত্রুটি।
  • অন্যান্য হার্টের অবস্থা - যেমন পেরিকার্ডাইটিস, মায়োকার্ডাইটিস এবং আরও অনেক কিছু।

ইসিজি পরীক্ষা হল একটি নিরাপদ এবং ব্যথাহীন পরীক্ষা যা সম্পাদন করতে মাত্র কয়েক মিনিট সময় লাগে এবং এটি ডাক্তারের অফিস, হাসপাতাল বা ক্লিনিকে করা যেতে পারে। আপনার স্বাস্থ্যসেবা প্রদানকারী ফলাফলগুলি ব্যাখ্যা করতে এবং কোন অতিরিক্ত পরীক্ষা বা চিকিত্সার প্রয়োজন কিনা তা নির্ধারণ করতে পারেন।

১২। Serum Testesterone, S. FSH, S. LH, S. Prolactin:

কোন ব্যক্তির যৌন রোগ থাকলে কিংবা বন্ধাত্ব হলে অথবা মেয়ে মানুষের গোফ দেখা দিলে, মাসিকে সমস্যা থাকলে সাধারণত এই টেস্ট গুলো দেওয়া হয়ে থাকে।

আরও পড়ুন -

আশা করি, কোন রোগের কি টেস্ট জানতে পেরেছেন। রোগ নির্ণয় এবং পর্যবেক্ষণের জন্য পরীক্ষাগুলি একটি গুরুত্বপূর্ণ হাতিয়ার। ল্যাবরেটরি পরীক্ষা, ইমেজিং পরীক্ষা এবং শারীরিক পরীক্ষা সবই রোগীর স্বাস্থ্য এবং কোনো নির্দিষ্ট রোগ বা অবস্থার উপস্থিতি সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহ করতে ব্যবহৃত হয়। যাইহোক, এটা মনে রাখা গুরুত্বপূর্ণ যে পরীক্ষাগুলি সর্বদা ১০০% নির্ভুল হয় না এবং এর সীমাবদ্ধতা থাকতে পারে বা নির্দিষ্ট রোগ বা অবস্থা সনাক্ত করতে অক্ষম হতে পারে।

নবীনতর পূর্বতন